স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু অজানা কথা, কবিতা ও ৫০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম | Independence Day 2022

Independence Day 2022: ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন হয় ১৫ আগস্ট। ১৯৪৭ সালে এই দিন ইংরেজদের শাসন থেকে স্বাধীন হবার কথা ঘোষণা করেছিলেন জোহরলাল নেহেরু। ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ তারিখ ভারত স্বাধীন হবার কারণে এই দিন সরকারি ছুটি ও স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। এই দিন আমাদের দেশের সমস্ত রাজ্যের সমস্ত জেলার স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি অফিস এবং কি পাড়ায় পাড়ায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় এবং নাচ, গান, অবৃতি ও সেই সঙ্গে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নেতা ও শহিদদেরও শ্রদ্ধা জানো হয়। দেশের প্রধান অনুষ্ঠানটি হয় দিল্লির লালকেল্লায়। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পতাকা উত্তোলন করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন।

ভারতের স্বাধীনতা দিবস এর পটভূমি (Independence Day Summary)

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ১৯৪৬ সালে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে যায়। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তারা ভারতের উপর ইংরেজদের শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকার জানিয়ে দেন যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার দিন যত সামনে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বাড়তে থাকে। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি ৭ মাস এগিয়ে নিয়ে আসেন। জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর ১৯৪৭ সালের জুন মাসে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন।

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু অজানা কথা, কবিতা ও ৫০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম

হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নতুন গঠিত দেশ পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় নিজের ঘর ছাড়া হয়ে পড়ে। তাঁরা দলে দলে সীমান্ত পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। বাংলা ও বিহারেও দাঙ্গা হয়। তবে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতির কারণে দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা কম করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আড়ায় থেকে পাঁচ লাখ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করেন। স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হন মাউন্টব্যাটেন।

সূত্র: উইকিপিডিয়া

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম (Indian Freedom fighters Name)

ভারতের কয়েকজন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম ও তাদের সম্পর্কে কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো।

স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নামজন্ম স্থানজন্মমৃত্যু
রানী লক্ষ্মী বাইকাশী (বারানসী)১৮২৮১৮ জুন ১৮৫৮
সুভাষ চন্দ্র বসুউড়িষ্যা২৩ জানুয়ারি ১৮৯৭১৭ আগস্ট ১৯৪৫
জওহরলাল নেহেরুএলাহাবাদ১৪ নভেম্বর ১৮৮৯২৭ মে ১৯৬৪
লাল বাহাদুর শাস্ত্রীউত্তরপ্রদেশ২ অক্টোবর ১৯০৪১৯৬৬
চন্দ্রশেখর আজাদভবরা২৩ জানুয়ারি ১৯০৬২৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১
বাল্ গঙ্গাধর তিলকমহারাষ্ট্র (রত্নাগীরি)২৩ জুলাই ১৮৫৬১ আগস্ট ১৯২০
লাল লাজপথ রাইপাঞ্জাব২৮ জানুয়ারি ১৮৬৫১৭ নভেম্বর ১৯২৮
ভগৎ সিংপাঞ্জাব২৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৭২৩ মার্চ ১৯৩১
মঙ্গল পান্ডেউত্তর প্রদেশ১৯ জুলাই ১৮২৭৮ এপ্রিল ১৮৫৭
ক্ষুদিরাম বসুহাবিবপুর৩ ডিসেম্বর ১৮৮৯১১ আগস্ট ১৯০৮
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলনাদিয়ার৩১ ওক্টবের ১৮৭৫১৫ ডিসেম্বর ১৯৫০
ভীমরাও আম্বেদকরমহু, মধ্যপ্রদেশ১৪ এপ্রিল ১৮৯১৬ ডিসেম্বর ১৯৫৬
মহামাত্মা গান্ধীগুজরাট২ অক্টোবর ১৮৬৯৩০ জানুয়ারি ১৯৪৮
বিরসা মুন্ডারাচি১৫ নভেম্বের ১৮৭৫৯ জুন ১৯০০
বাহাদুর শাহ জাফরদিল্লি২৪ অক্টোবর ১৭৭৫৭ নভেম্বের ১৮৬২
অস্ফা কুল্লাহ খানউত্তর প্রদেশ২২ অক্টোবর ১৯০০১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭
সরজনি নাইডুহায়দ্রাবাদ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৮৭৯২ মার্চ ১৯৪৯
শুকদেব থাপারলুধিয়ানা১৫ মে ১৯০৭২৩ মার্চ ১৯৩১
ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদগিরাদেই৩ ডিসেম্বর ১৮৮৪২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩
রাম প্রসাদ বিসমিরশাহজাহান পুর১১ জুন ১৮৯৭১৯ ডিসেম্বর ১৯২৭
শিবরাম রাজগুরুপুনে২৪ আগস্ট ১৯০৮২৩ মার্চ ১৯৩১
সহিদ উধম সিংপাঞ্জাব২৬ ডিসেম্বর ১৮৯৯৩১ জুলাই ১৯৪০
দুর্গাবাতী দেবীবাংলা৭ অক্টোবর ১৯০৭১৫ অক্টোবর ১৯৯৯
গোপাল কৃষ্ণ গোখলেমুম্বাই৯ মে ১৮৬৬১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯১৫
মদন মোহন মালব্যএলাহাবাদ২৫ ডিসেম্বর ১৮৬১১২ নভেম্বের ১৯৪৬

এছাড়াও আরো কিছু স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম নাম নিচের তালিকায় দেওয়া হলো।

  • তাঁতিরা টোপে
  • নানা সাহেব
  • রাজা রামমোহন দাস
  • বিপিন চন্দ্র পাল
  • চিত্তরঞ্জন দাস
  • কস্তরবা গান্ধী
  • আবুল কালাম আজাদ
  • দাদাভাই নওরোজি
  • বীর বিনায়ক দামোদর সভারকর
  • গোবিন্দ বল্লভ পন্ত
  • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • বাটুকেস্বর দত্ত
  • রস বিহারী বসু
  • বেগম হযরত মহল
  • জয় প্রকাশ নারায়ণ
  • গণেশ শঙ্কর ভিরথী
  • কর্তার সিং সারাভা
  • সূর্য সেন
  • আশফাক আলী
  • গণেশ ঘোষ
  • বিনা দাস
  • কল্পনা দত্ত
  • মদন লাল ধিংড়া
  • অ্যানি বেসেন্ট
  • সুবোধ রায়

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা (Independence Day Poem In Bengali)

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য

~ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়–
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা–
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।

কারার ঐ লৌহকপাট

~ কাজী নজরুল ইসলাম

কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার
পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান,

বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক
প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

গাজনের বাজনা বাজা,
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত
স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন
তথ্য কে রে!

ওরে ও পাগলা ভোলা,
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে
হেচ্কা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক,
কাধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে
ডাক জীবন পানে।

নাচে ওই কালবোশাখী,
কাটাবী কাল বসে কি
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ
ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী

শালায়-আগুন-জ্বালা,
আগুন-জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।।

স্বাধীনতা তুমি

~ শামসুর রাহমান

রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুর গ্রন্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি
পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন (Indipendent Day FAQ)

স্বাধীনতা দিবস কবে পালন করা হয়?

স্বাধীনতা দিবস প্রতিবছর ১৫ আগস্ট পালন করা হয়।

কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম?

কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম হলো লক্ষ্মী রানী বাই, সুভাষ চন্দ্র বসু, মহাত্মা গান্ধী, ক্ষুদিরাম বসু, ভগৎ সিং এছাড়াও আরো অনেক রয়েছে। যেগুলি উপরে উল্লিখিত রয়েছে।

স্বাধীনতা দিবসে কি কি করা হয়?

স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক এবং সহিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস ও আদালতে মিষ্টান্ন বিতরণ করে ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

ভারত কতো সালে স্বাধীনতা পায়?

200 বছরেরও বেশি ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারত স্বধানতা পায়।

স্বাধীনতা দিবস এর কিছু কবিতার নাম?

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা কারার ঐ লৌহকপাট, শামসুর রাহমান এর লেখা স্বাধীনতা তুমি ইত্যাদি।

বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন

Leave a Comment